সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, একটি অসাধারণ রবীন্দ্রসঙ্গীত। মূলত এটি একটি
ভক্তিমূলক গান।
গানের প্রতিটি স্তবকে ভক্তি অপরূপভাবে ফুটে উঠেছে।
গানের প্রতিটি স্তবকে ভক্তি অপরূপভাবে ফুটে উঠেছে।
সকাতরে
ওই কঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা/ কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে
মঙ্গলবারতা/ ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা/ যা কিছু পায়,
হারায়ে যায়, না মানে সান্ত্বনা/ সুখ-আশে দিশে দিশে বেড়ায় কাতরে- / মরীচিকা
ধরিতে চায় এ মরুপ্রান্তরে/ ফুরায় বেলা, ফুরায় খেলা, সন্ধ্যা হয়ে আসে-/
কাঁদে তখন আকুল-মন, কাঁপে তরাসে/ কী হবে গতি, বিশ্বপতি, শান্তি কোথা আছে-/
তোমারে দাও, আশা পুরাও, তুমি এসো কাছে।।
প্রতিটি স্তবক যেন সাধারণের মনের কথা বলছে।
মানুষের
জীবনের এক অতি সাধারণ দর্শন গানটির মাঝে ভাষা খুঁজে পেয়েছে। হারাবার ভর,
আঁকড়ে ধরে থাকার প্রবৃত্তি, আশার মাঝে জীবনের মর্ম খুঁজে পাওয়া,
সুখ-স্বপ্ন, সুখের পেছনে অবিরাম ছুটে চলা-মানব প্রকৃতির এই চিত্র রবিঠাকুর
অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এ গানে।
সর্বাধিক সুন্দর দিক এ গানের,
ফুরায় বেলা, ফুরায় খেলা, সন্ধ্যা হয়ে আসে-/ কাঁদে তখন আকুল-মন, কাঁপে
তরাসে/ কী হবে গতি, বিশ্বপতি, শান্তি কোথা আছে-/ তোমারে দাও, আশা পুরাও,
তুমি এসো কাছে।।
এ অংশে এসে মানুষের অসহায়ত্ত্ব, ক্ষুদ্রত্ত্ব,
সসীমতা ফুটে উঠেছে। দিন শেষে আমরা সবাই একা অসহায়, দিন অতিবাহিত হয়, মানুষ
তার জীবনের শেষ পাতাগুলোর দিকে ধাবিত হয়। অর্থ বিত্ত বৈভব এসব পার্থিব
জিনিসগুলোকে তখন সত্যিই খুব তুচ্ছ মনে হয়। একটা সময় আসে যখন মৃত্যুভয় ঢুকে
মানুষের মনে, সমগ্র জীবনের দিকে পিছুফিরে তাকালে নিজেকে ব্যাতীত আর কিছুই
দেখা যায় না, তখন ভয় ঢুকে মনে, একাকীত্ত্বের ভয়, একলা পৃথিবীটাকে ফেলে
যাবার ভয়, কোনো এক বিকেলে চায়ের কাপে কারোর মনে না আসার ভয়, স্বার্থপরতার
ভয়!
মানুষ বড়ই অসহায়, দিন শেষে একমাত্র অধিপতিই আমাদের শেষ সম্বল।
সকল হতাশা, সকল পরাজয়, সকল অসফলতার উত্তর অধিপতি, সকল কিছুর শেষে একমাত্র
অধিপতির কাছেই আমাদের শেষ আকুতি, শেষ প্রার্থনা।